ইসলামে দোআ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও স্বতন্ত্র ইবাদত। কোরআন ও হাদিসে বিভিন্ন সময়ে, নানা প্রসঙ্গে এবং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে দোআর গুরুত্ব ও উপযোগিতা তুলে ধরা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের শিখিয়েছেন, ছোট থেকে বড়—সব বিষয়ের জন্যই আল্লাহর দরবারে দোআ করা উচিত।
হজরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) একবার এমন একজন ব্যক্তির পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, যে দোআ করছিল—"হে আল্লাহ! আমাকে সবর করার তাওফিক দিন।" উত্তরে রাসুল (সা.) বলেছিলেন, "তুমি তো আল্লাহর কাছে মুসিবত চাইছো, কেননা সবর তো কষ্টের ওপরই হয়ে থাকে। বরং আল্লাহর কাছে নিরাপদ জীবন চাও।"
অন্য এক ব্যক্তি দোআ করছিল—"হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট পরিপূর্ণ নেয়ামত চাই।" জবাবে রাসুল (সা.) বলেছিলেন, "তুমি কি জানো, পরিপূর্ণ নেয়ামত কী?" ব্যক্তি বললেন, "ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমি শুধু কল্যাণের জন্যই তা চেয়েছি।" তখন রাসুল (সা.) ব্যাখ্যা করে বলেন, "পরিপূর্ণ নেয়ামত হলো—জাহান্নাম থেকে মুক্তি এবং জান্নাতে প্রবেশ।"
আরেক ব্যক্তি "ইয়া যাল-জালালি ওয়াল-ইকরাম" বলে দোআ করছিল। রাসুল (সা.) তখন বলেছিলেন, "তোমার দোআ কবুল হয়েছে, চেয়ে নাও যা চাই।"
হাদিসে এসেছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেছেন—"তোমাদের প্রত্যেকের দোআ কবুল হয়ে থাকে, যদি সে তাড়াহুড়া না করে এবং এ কথা না বলে যে, 'আমি তো দোআ করলাম, কিন্তু কবুল হলো না।'" (বুখারি ৬৩৪০)
তিরমিজির এক বর্ণনায় হজরত জাবির (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, “যখন কোনো ব্যক্তি দোআ করে, আল্লাহ তাকে তা দান করেন কিংবা তার অনুরূপ অকল্যাণ দূর করে দেন—যতক্ষণ না সে পাপের জন্য বা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার জন্য দোআ করে।”
রাসুল (সা.) আরও বলেন, “যদি কেউ চায় যে, বিপদের সময় তার দোআ কবুল হোক, তাহলে সে যেন স্বচ্ছল ও স্বস্তির সময় বেশি বেশি দোয়া করে।” (তিরমিজি ৩৩৮২)
হজরত সালমান (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, “দোআ ছাড়া কিছুই তাকদির পরিবর্তন করতে পারে না এবং ভালো কাজ ছাড়া কিছুই আয়ু বাড়ায় না।” (তিরমিজি ২১৩৯)
দোআ শুধু বিপদের সময় নয়, শান্তি ও স্বস্তির সময়েও করতে বলা হয়েছে। কারণ, যারা সুখের সময় আল্লাহর দরবারে বেশি বেশি দোআ করে, তাদের দোআ বিপদের সময় সহজেই কবুল হয়। রাসুল (সা.)-এর শিক্ষা অনুসারে, আল্লাহর নিকট সবসময় কল্যাণ, নিরাপত্তা ও জান্নাত প্রার্থনা করা উচিত। দোআর মাধ্যমে মানুষ নিজের ভাগ্য ও ভবিষ্যৎ বদলাতে পারে—এটি ইসলামের একটি গভীর ও প্রভাবশালী শিক্ষা।